যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী পোশাকের বাজার সুবিধা (জিএসপি) পর্যালোচনার উদ্যোগে উদ্বিগ্ন টিআইবি;
দায়িত্বশীল ও নৈতিকতাসম্পন্ন ব্যবসা পরিচালনায় ভূমিকা রাখার আহ্বান
ঢাকা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১২: তাজরীন গার্মেন্টেসে সাম্প্রতিক অগ্নিকান্ডের দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের কিছুসংখ্যক আইন প্রণেতা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী গার্মেন্টস পণ্যের বাজার সুবিধা (জিএসপি) সংক্রান্ত অবস্থানের পর্যালোচনা করার সুপারিশ করছে এই মর্মে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন এবং ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের অধিকতর ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার মত পদক্ষেপ গ্রহণে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বাংলাদেশী এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাজরীন গার্মেন্টসে অগিড়বকান্ডের প্রতিক্রিয়া হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের জিএসপি ভিত্তিক প্রবেশাধিকার অব্যাহত থাকবে কিনা তা দ্রুত পর্যালোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ১২ জন আইন প্রণেতার একটি দল সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরে অনুরোধ করেছে।
এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘তাজরীন গামেন্টস ট্রাজেডির দায় আইনের শাসনে ঘাটতি, দুর্নীতি ও বেপরোয়া মুনাফা অর্জনের নেশার ওপর বর্তায়। এই ঘটনায় দায়ী সকলকে বিচারের আওতায় এনে পোশাক শ্রমিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিধান করে ভবিষ্যতে এরূপ দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। তথাপি এ ধরণের দুর্ঘটনার সূত্র ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী গার্মেন্টস পণ্যের প্রবেশাধিকার সীমিত করার কোন পদক্ষেপই গ্রহণযোগ্য সমাধান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। এটি একদিকে যেমন মাথা ব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলা এবং বাস্তবে গার্মেন্টস শিল্পে নিয়োজিত কর্মীদেরকে, বিশেষ করে যাদের ৮৫ শতাংশই নারী, তাদেরকে বিনাদোষে শাস্তি প্রদান করারই নামান্তর”।
ড. জামান বলেন, ‘‘পোশাক শিল্পে কর্মের পরিবেশ অবনতির কারণে আমরা সবাই সমানভাবে উদ্বিগ্ন এবং আমরা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারক, বিশেষভাবে সে দেশের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে এই ধরণের অদূরদর্শী, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও কাপুরুষোচিত উদ্যোগ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি”।
উক্ত পদক্ষেপের যুক্তি হিসেবে যেহেতু পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঘাটতির বিষয়টি উল্লিখিত হয়েছে সে কারনে টিআইবি আরো বেশী উদ্বিগ্ন। মার্কিন আইন প্রণেতাদের এ ধরণের অবস্থান আত্মঘাতী ফল বয়ে আনতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। কারণ এর ফলে পোষাক শিল্পের বাজার সংকোচনের মাধ্যমে বেকারত্ব বৃদ্ধি হতে পারে যা বাস্তবে নিরপরাধ পোষাক কর্মীদের অধিকার হরণেরই সমতুল্য। এরূপ নেতিবাচক অবস্থান ত্যাগ করে বরং পোশাক শ্রমিকের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও কল্যাণের বিষয়টি নিশ্চিত করে অধিকতর ব্যবসা চুক্তি সম্পাদনে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য সে দেশের সরকারসহ ব্যবসায়ি মহলকে তিনি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, তাজরীন গার্মেন্টস ঘটনার ফলে বাংলাদেশ থেকে গামেন্টস শিল্পের ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের চলে যাবার মত অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত নয়, বরং দায়িত্ব ও সততার সাথে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ক্রেতা-বিক্রেতা, উৎপাদনকারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্যোগী হতে হবে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ ক্যারোলিনায় কিছু মার্কিন নাগরিক তাজরীন গার্মেন্টস দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান তথা অধিকতর সৎ, নৈতিক ও দায়িত্বশীল ব্যবসা পরিচালনার আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদেরকে অনুরোধ করেছেন যা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র যাদের সাথে ব্যবসা করে, বিপদের সময়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে দায়িত্ব গ্রহণ না করে নিরাপদে ব্যবসা গুটিয়ে নিলে তা হবে কাপুরুষোচিত আচরণ। সুলভ মূল্যের পোশাক থেকে মুনাফা অর্জন সহজ, তবে এর পেছনে যে কর্মীরা অবদান রাখছেন তাদের নিরাপত্তা বিধানে যে বিনিয়োগের প্রয়োজন, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্রেতা ও সরকারকে তার ভাগীদার হতে হবে। কেবল তখনই আমরা আশ্বস্ত হব যে পশ্চিমা বিশ্ব যা প্রচার করে তা তারা নিজেরা চর্চাও করে।