‘সেবাখাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ’ টিআইবি’র একটি অন্যতম প্রধান গবেষণা কার্যক্রম। ১৯৯৭ সাল থেকে টিআইবি এই জরিপ ধারাবাহিকভাবে পরিচালনা করে আসছে। এই জরিপের মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশের খানাগুলোর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সেবা খাতে দুর্নীতির প্রকৃতি ও মাত্রা নিরূপণ করা এবং জরিপে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে দিক-নির্দেশনামূলক সুপারিশ প্রদান করা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের জরিপে অন্তর্ভুক্ত খানাগুলো জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর’ ২০১৭ সময়ে বিভিন্ন সেবাখাত বা প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা গ্রহণকালে যে দুর্নীতির সম্মুখীন হয় তার ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ জরিপে পাসপোর্টসহ ১৫টি খাতের ওপর বিশ্লেষণধর্মী ফলাফল উপস্থাপন করা হয়, যা ৩০ আগস্ট ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত হয়।
জরিপে অংশ নেওয়া মোট ১৫,৫৮১টি খানার মধ্যে ৭.৫ শতাংশ খানার কোনো না কোনো সদস্য ২০১৭ সালে পাসপোর্ট সেবা নিয়েছে। এদের মধ্যে ৬৭.৩ শতাংশ দুর্নীতির শিকার হয়েছে এবং ঘুষের শিকার হয়েছে ৫৯.৩ শতাংশ। যেসব খানা ঘুষ বা নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ দিয়েছে তাদের গড়ে ২,৮৮১ টাকা দিতে হয়েছে। এছাড়া সেবা গ্রহণকারী খানা সময়ক্ষেপণ (১৬.০%), দায়িত্ব পালনে অনীহা (৭.২%) এবং প্রতারণাসহ (২.৪%) অন্যান্য দুর্নীতির শিকার হয়েছে। ঘুষের শিকার হওয়া খানার ৭১.৫ শতাংশ ঘুষ দেওয়ার কারণ হিসেবে ‘ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না’ বলে উল্লেখ করেছে।
পাসপোর্ট সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে দালালের সহযোগিতা নেয়া বা না নেয়া, সেবা গ্রহণের কেন্দ্র, সেবার ধরন ইত্যাদি ভেদে দুর্নীতির শিকার হওয়া খানার হারে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। যারা দালাল, পরিচিত ব্যক্তি বা আত্মীয়-স্বজন বা পাসপোর্ট অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতা নিয়েছেন তাদের দুর্নীতির শিকার হওয়ার হার বেশি (৮৫.৭%)। পক্ষান্তরে যারা অন্যের সহযোগিতা ছাড়া পাসপোর্ট সেবা গ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে দুর্নীতির শিকার হওয়ার মাত্রা তুলনামূলক কম (৩১.৪%)। আঞ্চলিক (জেলা) পাসপোর্ট অফিস থেকে সেবা গ্রহণকারী খানার ৭৩.১ শতাংশ এবং বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে সেবা গ্রহণকারী খানার ৫৭.২ শতাংশ অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। পাসপোর্টের জন্য নতুন আবেদনকারীদের ৬৯.৭ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির শিকার হয়েছেন, এ হার ‘রি-ইস্যু’ সেবা গ্রহণকারী খানার ক্ষেত্রে ৫৭.৮ শতাংশ। সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদনকারী খানার ৬৯.১ শতাংশ এবং জরুরী পাসপোর্টের জন্য আবেদনকারী খানার ৫৮.৭ শতাংশ দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।
এই জরিপের প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইতোপূর্বে সম্পাদিত বিভিন্ন গবেষণা ও অধিপরামর্শ কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে পাসপোর্ট সেবা প্রদানকারী কার্যালয়সমূহে পেশাগত দায়িত্ব পালনে উৎকর্ষ বৃদ্ধি, জনআস্থা বৃদ্ধি ও সর্বোপরি পাসপোর্ট সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে সহায়ক হিসেবে টিআইবি প্রণীত এ পলিসি ব্রিফটি উপস্থাপন করা হল।